পাঁচ বছর ধরে রোহিঙ্গাদের জন্য কোনো বিচার নেই, কোনো স্বাধীনতা নেই
Read a text description of this video
একজন রোহিঙ্গা শরনার্থী (কণ্ঠ)
[প্লিজ] রাস্তা [সীমান্ত] খুলে দিন। তারা [মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী] সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা কোনো সরকারের কথাই শুনছে না। নিজের ঘরের ভেতরেই হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। আমরা প্রকৃত সংখ্যা জানি না। বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষন করুন।
স্ক্রিনে টেক্সট
এই ভিডিওটিতে মৃতদেহের ছবি এবং সহিংসতার বর্ণনা রয়েছে।
দর্শককে সতর্কতার সাথে বিবেচনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কণ্ঠ
এই ভিডিওটি একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীর দ্বারা করা হয়েছিল ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে যার গ্রামে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আক্রমণ করেছিল৷ তিনি আন্তর্জাতিক সাহায্য পাওয়ার লক্ষ্যে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আর্জি জানাচ্ছিলেন।
পাঁচ বছর আগে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে বংশ পরম্পরায় বসবাসকারী মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগের ব্যাপক অভিযান শুরু করে। নিরাপত্তা বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে।
লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন, অন্যরা জাতিবিদ্বেষী অবস্থার মধ্যেই থেকে যান।
আব্দুল হালিম
আমরা তিনদিন ধরে হেঁটেছি।
গবেষক (কণ্ঠ)
তিনদিন ধরে হেঁটেছেন?
আব্দুল হালিম
সেনাবাহিনী [গ্রামের] বাড়িঘর সব পুড়িয়ে দেয়। তুলা তলির এক ইসলামী আলেমকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
কণ্ঠ
ইনি আব্দুল হালিম। তার পিঠে তার মা । তারা রোহিঙ্গা শরণার্থী, যারা ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন।
তারা ছিলেন ৭ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গাদের মধ্যে দুই জন যারা বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং আগে যারা সহিংসতা থেকে পালিয়ে এসেছিলেন তেমন কয়েক হাজারের রোহিঙ্গার সাথে যোগ দিয়েছিলেন।
আব্দুল হালিম
আমি যখন আমার মাকে আমার পিঠে বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন: "আমার ছেলে, তুমি দীর্ঘজীবী হও এবং সারা জীবনে তোমাকে কখনও কোনও দুঃখের মুখোমুখি হতে যেন না হয়। তোমার জীবন পূর্ণতা পাক" আমার মা আমাকে সবসময় এভাবেই আশীর্বাদ করতেন।
হাসপাতালে আমি যখন আমার মায়ের সাথে ছিলাম, ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন যে তার অবস্থা ভাল নয় এবং তিনি নাও বাঁচতে পারেন। আমার মা জিলহজ (আরবি চান্দ্রমাসের ক্যালেন্ডার) এর ১৬ তারিখে মারা যান।
এখন আমার তিনটি সন্তান। বড়টি মেয়ে এবং ছোট দুজন ছেলে।
গত পাঁচ বছর ধরে রোহিঙ্গা শিশুদের পড়াশোনার জন্য স্কুলগুলো মানসম্মত নয়। প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি, তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির মত কোন প্রাতিষ্ঠানিক স্কুল এখানে নেই। তাই আমাদের বাচ্চারা সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে না।
মিয়ানমারে, তারা আমাকে "নোয়া কালার" বলে ডাকে, যার অর্থ দাঁড়ায় আমরা পশুর মতো। তারা আমাদের এসব ডাকত কারণ আমাদের কোন শিক্ষা ছিল না। এখানেও, আমরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষা দিতে পারি না।
কণ্ঠ
বাংলাদেশ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে সকল রোহিঙ্গা পরিচালিত স্কুল নিষিদ্ধ করে। শিক্ষক এবং অভিভাবকদের ভাসানচর নামক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে স্থানান্তরিত করার অথবা তাদের আইডি কার্ড বাতিল করার হুমকি দেওয়া হয়। মিয়ানমারের পাঠ্যক্রম এখন চালু করা হচ্ছে, কিন্তু শুধুমাত্র নবম শ্রেণি পর্যন্ত, এবং সেটিও প্রত্যায়িত নয়।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার পাঁচ বছর পর, প্রায় এক মিলিয়ন শরণার্থী ক্রমবর্ধমান নিপীড়নমূলক পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে জনাকীর্ণ শিবিরে বাস করছেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে স্বীকৃতি এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রদান করা উচিত।
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চলাফেরার স্বাধীনতা এবং কাজ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকারকে সম্মানের সাথে বিবেচনা করা।
২০১৭ সালের আগস্টে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী তুলা তলি গ্রামে শত শত পুরুষ, মহিলা এবং শিশুকে গণহত্যা ও ধর্ষণ করে।
মোহাম্মদ আয়াজ পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। বাবা-মাসহ তার পরিবারের অন্তত ১২ জন নিহত হন।
মোহাম্মদ আয়াজ
আমাদের মা ও বোনদের হত্যা করা হয়েছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা [সৈন্যরা] আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছিল। আমাদের মধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এখানে [বাংলাদেশ] পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।
কণ্ঠ
মোহাম্মদের বয়স এখন ২১ বছর। এবং তিনি এখন তার ফুফু ও ফুপার সাথে একটি শরণার্থী শিবিরে থাকেন।
মোহাম্মদ আয়াজ
অসুস্থতা এবং বুলেটের ক্ষতের কারণে আমি কোনো ভারী কাজ করতে পারি না। আমি জানি না আমি কী করব।
এখানকার হাসপাতাল শুধুমাত্র প্যারাসিটামল লিখে দেয় কিন্তু তা আমার অসুস্থতার নিরাময় করতে সাহায্য করে না। আমাদের কক্সবাজার বা পালংখালী যেতে হবে, কিন্তু তাতে আমাদের অনেক টাকা খরচ হবে। ক্যাম্পের ভেতরের হাসপাতালটি যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে না।
কণ্ঠ
বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধির অভাব শরণার্থীদের জন্য রোগের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। স্থান ও সম্পদের উপর বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে শিবিরগুলোতে ভূমিধস, বন্যা এবং অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে । এমনকি এইসব পরিস্থিতিও শিবির ত্যাগের অনুমতি ছাড়াই তারা সামলে নিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা বাড়ানো।
হাসিনা হাতু
বৃষ্টি ও ভীড়ের কারণে আমার বাবা ঢাল থেকে পড়ে মারা যান।
কণ্ঠ
ছেলে ও বুকে ব্যথায় ভুগতে থাকা স্বামী আবুল হোসেনকে নিয়ে ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসেন হাসিনা হাতু।
হাসিনা হাতু
ক্যাম্প জীবনের প্রথম তিন বছর খুব কষ্টের ছিল। আমার স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা খুবই কঠিন ছিল। তারপর তিনি মারা যান। আমার এখন কোন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে বা স্বামী নেই, তাই কোন উপার্জনকারীও নেই। পরিবারে আমরা দুজন মানুষ। আমরা [মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সাহায্য থেকে] পাঁচ কেজি চাল পাই, যা যথেষ্ট নয়। এখন আমি খাবারের জন্য কিছু সেলাইয়ের কাজ করি। আমরা যদি [মিয়ানমারে] ফিরে যেতে পারি, যদি আমাদের বাড়ি এবং জমি আবার ফিরে পাওয়া যায়, আমরা খুশি হব।
কণ্ঠ
মিয়ানমারে, প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা জাতিবিদ্বেষ ও নিপীড়নের শিকার অবস্থায় আটকে আছেন।
২০২১ সালে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার জন্য দায়ী জেনারেলরা দেশব্যাপী একটি অভ্যুত্থান এবং নৃশংস দমন অভিযান শুরু করেছিল।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য যে কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
(ব্যাংকক) – আজ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে যে, ২৫শে আগস্ট, ২০১৭-তে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক হত্যাকান্ড, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগের ব্যাপক অভিযান শুরু করার পাঁচ বছর পরেও রোহিঙ্গা মুসলিমরা এখনও ন্যায়বিচার এবং তাদের অধিকারের সুরক্ষার অপেক্ষায় আছে। ৭৩০,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনিশ্চিত, বন্যা প্রবণ ক্যাম্প এলাকায় পালিয়ে এসেছিল, এবং প্রায় ৬০০,০০০ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের নিপীড়ন এর ভেতর রয়ে গিয়েছে।
এই মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার মত অভিযানের জন্য কাউকে দায়বদ্ধ করা হয়নি। এই সময়ে সংশ্লিষ্ট সরকারদের আর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে জবাবদিহি করতে এবং বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং সমগ্র অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসা দরকার।
Related Content
![A man climbs through barbed wire fencing at a Rohingya refugee camp in Cox’s Bazar, Bangladesh, as a massive fire swept through the camps on March 22, 2021.](/sites/default/files/styles/16x9_large/public/media_2021/03/202103asia_bangladesh_fire.jpg?h=82f92a78&itok=fr_uGDr0)